Rahul Olo's Archive ;)

‘ম্যালেরিয়া’ প্রতিরোধের চিকিৎসা ভ্রমণকালীন সময়ে।


‘ম্যালেরিয়া’ প্রতিরোধের চিকিৎসা ভ্রমণকালীন সময়ে।

লেখকঃ ডাঃ ইমরুল হাসান ওয়ার্সী।


আমাদের বাংলাদেশে এডভেঞ্চারার ট্রাভেলারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে আর পার্বত্য জেলা সমূহ হয়ে উঠেছে এডভেঞ্চার ডেস্টিনেশন এর তালিকার প্রথম দিকে একটু অবসর পেলেই আমাদের তরুণ এডভেঞ্চারার ট্রাভেলাররা ছুটে যান পার্বত্য অঞ্চলে আর কেনই বা যাবেন না? উঁচু-নিচু পাহাড়, সবুজ বনানী, ঝর্ণা, ছড়া, নানা রঙের পাখি আর বুনো ফুল, মূল্যবান জীব বৈচিত্রে ভরা পাহাড়ি  অঞ্চল আর পাহাড়িদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতি আমাদের সবাইকেই তো ম্যাজিকের মতই টানে

কিন্তু এইসব সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ম্যালেরিয়া, সাপ, জোঁক, বিভিন্ন বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়, খাদ্যে বিষক্রিয়া, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স, ড্রওনিং, হিট স্ট্রোক, হিট এক্সসন, হাত-পা মচকে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া, সহ নানা রকম ঝুঁকি যাদের যেকোনো একটিই ম্যাজিককে ট্রাজিক পরিণত করতে পারে

তাই নির্বিঘ্নে এডভেঞ্চার করতে আমাদের হতে হবে "সচেতন, সতর্ক এবং সদা প্রস্তুত"

এখন জানব কিভাবে পূর্ব সতর্কতার সাথে ‘ম্যালেরিয়া’ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবানু বহন করে এবং এই মশার কামড়েই মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়

পাহাড়ে ভ্রমনকারী সচেতন মহলের কাছে ম্যালেরিয়া একটি মূর্তিমান আতংকের নাম। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু অনিবার্য। কোনো কোনো ম্যালেরিয়া যেমন সেরিব্রাল ম্যালেরিয়াতে আবার চিকিৎসার সময়ই পাওয়া যায় না। আমি পার্বত্য জেলায় এরকম বেশ কিছু কেস পেয়েছি যারা সেরিব্রাল ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে কোনো রকম চিকিৎসা নেবার আগেই

অথচ একটু সচেতন হলেই এই ঘাতক ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার এবং মশারোধী ক্রিম শরীরের খোলা জায়গায় মেখে নিলে এবং সঠিক নিয়মে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী চিকিৎসা নিলে অনায়াসে ম্যালেরিয়া মুক্ত থাকা যায়

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ABCD:
A: Awareness about Malaria distribution, অর্থাৎ ভ্রমণের স্থান ম্যালেরিয়া প্রবণ কি না সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে

B: Bite control, অর্থাৎ ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় মশার কামড় প্রতিরোধ করতে হবে

C: Chemoprophylaxis, অর্থাৎ ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের চিকিৎসা নিতে হবে

D: Diagnosis and treatment, অর্থাৎ দ্রুত রোগ নির্ণয় করে ম্যালেরিয়া হয়ে থাকলে চিকিৎসা নিতে হবে

A এবং B নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করেছি।
এবারে C অর্থাৎ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের প্রচলিত চিকিৎসা সম্পর্কিত এই টেবিল থেকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ঔষধগুলো সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাওয়া যাবে
এখন যদি কেউ প্রশ্ন করেন সবচেয়ে সহজ চিকিৎসা কোনটি?

নম্বরে আসবে ম্যালেরণ (atovaquine+Proguanil), কারণ মাত্র দিন আগে শুরু করে ভ্রমন শেষের মাত্র দিন এই কম্বিনেশনে ঔষধটি খেতে হবে। তাছাড়া নুন্যতম বছরের শিশু থেকে শুরু করে সবাই খেতে পারে এবং রেসিস্টান্ট হবার কোনো রিপোর্ট নাই
তবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই ওষুধ এদেশে খুব একটা সহজ প্রাপ্যও নয়

Chloroquine এর ক্ষেত্রে সপ্তাহ আগে শুরু করে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় যতদিন থাকবেন ততদিন প্রতি সপ্তাহে টি করে খেতে হবে এবং ফিরে আসার পর সপ্তাহে চারটি ট্যাবলেট খেয়ে ডোজ কমপ্লিট করতে হবে। এখন ধরুন আপনি এলাকায় সপ্তাহ থাকলেন। তাহলে আপনার ডোজ হবে সপ্তাহের টি ট্যাবলেট (ভ্রমণের পূর্বে টি + ভ্রমন কালে টি + ভ্রমন পরবর্তী টি)।

Doxicycline এর ক্ষেত্রে দিন আগে শুরু করে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় যতদিন থাকবেন ততদিন প্রতি দিন  টি করে খেতে হবে এবং ফিরে আসার পর ৪ সপ্তাহে অর্থাৎ ২৮ দিন প্রতিদিন টি করে ট্যাবলেট খেয়ে ডোজ কমপ্লিট করতে হবে। এখন ধরুন আপনি ওই এলাকায় ২ দিন থাকলেন। তাহলে আপনার ডোজ হবে ৩১ দিনের ৩১ টি ট্যাবলেট (ভ্রমণের দিন পূর্বে টি + ভ্রমন কালে টি + ভ্রমন পরবর্তী ২৮ টি)।

Mefloquine আর Chloroquine ডোজ একই রকম তবে শুরু করতে ভ্রমণের হবে সপ্তাহ আগে। থাইল্যান্ড ওষুধ টি প্রায়ই রেসিস্টান্ট হয়ে গেছে তাই যারা ওই দেশের ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ভ্রমন করবেন তাদের Mefloquine ছাড়া অন্য রেসিস্টান্ট নেয়া বাঞ্চনীয়

*** মনে রাখত হবে যে, এই ঔষধগুলোর একটি ডোজও যদি বাদ যায় তাহলে আপনি ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন এবং এই ঔষধ পরবর্তীতে আপনার জন্য কাজ নাও করতে পারে।

প্রসঙ্গ ক্রমে বলে রাখি, যদিও Chloroquine (ক্লরোকুইন) ম্যালেরিয়ার স্পেসিফিক ওষুধ তারপরেও এডভেঞ্চারার টুরিস্টদের ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য আমি Doxicycline (ডক্সিসাইক্লিন) – ঔষধটিকেই এগিয়ে রাখি এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে যেমনঃ

অধিকাংশ সময়েই আমরা হুট করে / দিনের নোটিশে ট্যুর প্লান করে থাকি ফলে সপ্তাহ আগের ক্লোরোকুইন খাওয়া পসিবল হয় না কিন্তু Doxicycline আগের রাতেই শুরু করে একই ফল পাওয়া যায়

Doxicycline পাড়া মহল্লার প্রায় সকল ঔষধের দোকানেই পাওয়া যায় অন্যদিকে Chloroquine এর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। যদি আপনার কাছে ফুল ডোজ না থাকে কিংবা হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়

এডভেঞ্চার ট্যুরে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি ছাড়াও পোকা-মাকড়ের কামড় কিংবা ছোটখাটো কাঁটা-ছেড়া থেকে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে, যা Doxicycline কভারেজে খাকার কারণে হ্রাস পায় Chloroquine এর ক্ষেত্রে এই বাড়তি সুবিধা নেই 

সপ্তাহে টা ঔষধ খেতে হয় বলে Chloroquine এর ডোজ ভুলে যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

Chloroquine এর তুলনায় Doxicycline দামেও বেশ কম।
  
Doxicycline দামে কম (একই সাথে লাভও কম) হবার কারণে ফার্মাসিতে বিক্রেতাদের কাছে কম জনপ্রিয়। ফলে যত্রতত্র ব্যবহার না হবার কারণে রেজিস্টান্স হবার সম্ভাবনা অনেক কম। 



ডাঃ ইমরুল হাসান ওয়ার্সী ভাইয়া - এর ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ বিষয়ক লেখাটি যদি পড়তে ও শেয়ার করতে চাইলে, শর্ট লিংকঃ https://goo.gl/3mhS9u

ফেসবুকে ডাঃ ইমরুল হাসান ওয়ার্সী ভাইয়া - এর ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ বিষয়ক লেখাটির প্রকৃত নোট লিংকঃ https://goo.gl/WUTWiM

প্রয়োজনে সবকিছু!


Search anything from this blog ;)